সার্টিফিকেটের প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি!

সার্টিফিকেটের প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি!

সাকিব সাদামাটা মনের ছেলে৷ ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো৷ লোকজন বললো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। যথারীতি ভর্তি পরীক্ষার সময় এলো। সুযোগ মিললো একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে। 

সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করলো। একমাস ক্লাস করলো সাকিব। সিনিয়র ভাইদের রুমে গিয়ে বিনামূল্যে ম্যানার কোর্সের অনেকটাই সম্পন্ন করেছে সাকিব। সবকিছু চলছিলো ঠিকঠাক। হঠাৎ করোনা এলো। 

সাকিব বাড়ি চলে এলো। গরুর হাট চলে, চলে মুদির দোকান, কেউবা ঘুরতে চায় কক্সবাজারে আবার কেউবা মাদাগাস্কারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো আর খুলে না! তার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় তার সাথে প্রতারণা করেছে। 

ফারহানা একটি ন্যাশনাল কলেজে পড়ে। সে যখন তৃতীয় বর্ষে উঠলো তখন তার জন্য সুপাত্র দেখতে শুরু করলো মুরব্বি সমাজ। হঠাৎ করোনা এলো। সে গত দেড় বছর ধরে তৃতীয় বর্ষে পড়ে৷ তার মায়ের প্রতিজ্ঞা তাকে অনার্স শেষ করিয়ে তবেই বিয়ে দিবে। 

তার ধারণা তার কখনোই বিয়ে হবে না। গরুর হাট চলে, চলে মুদির দোকান, কেউবা ঘুরতে চায় কক্সবাজারে আবার কেউবা মাদাগাস্কারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো আর খুলে না! তার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় তার সাথে প্রতারণা করেছে। 

আসিফ বিসিএস পাগল ছেলে। সে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। গতো দেড়টি বছর ধরে সে তৃতীয় বর্ষে পড়ে। ইতিমধ্যে সে তার নিজ বিভাগীয় সব পড়াশোনা খেয়ে ফেলেছে। খেয়ে ফেলেছে মানে ভুলে গেছে। তার ধারণা সে আর কখনোই ক্যাডার হতে পারবেনা। গরুর হাট চলে, চলে মুদির দোকান কেউবা ঘুরতে চায় কক্সবাজারে আবার কেউবা মাদাগাস্কারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো আর খুলে না! তার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় তার সাথে প্রতারণা করেছে। 

তাদের সবার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। সার্টিফিকেট দেয়ার নাম করে তাদেরকে নিজের কাছে আগলে রেখেছে। 

একবার বন্ধুমহলের রসিক বন্ধু ইমরান বলেছিলো, 'করোনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ডিম পেড়েছেআর ডিমে তা' দিয়ে ডিম ফুটাচ্ছে। তাইতো হাট-বাজার, দোকান-পাট কখনো খোলে কখনো বন্ধ হয়। 

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই খোলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে করোনারা বাড়ি বানালেও শিক্ষক কোয়ার্টারের দিকে তাদের তেমন নজর নেই। তারা পড়াশোনায় খুব ভয়। যদিও করোনারা এটা জানে না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন পেলেই হয়। 

তাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইন ক্লাসেই ঠিকমতো আসেনা আর স্ব প্রণোদিত হয়ে পড়ানো তো অনেক দূরের কথা৷ আর স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মোটেও এগিয়ে নেই। এজন্যই করোনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বাড়ি বানিয়েছে।'

দিনশেষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ধারণা তাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে সার্টিফিকেটের প্রলোভন দেখিয়ে ঝাপটে ধরছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে ভালোবেসেই ঝাপটে ধরে আছে যে ভালোবাসা চায় না শিক্ষার্থীরা। এ যেনো মধুর সমস্যা। 

লেখক: যোবায়ের ইবনে আলী (শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর)।