আমরা ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে আছি: প্রধানমন্ত্রী

আমরা ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে আছি: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে আছে এবং সহযোগিতা করে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২ জুন) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্যদের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনা অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবে প্যালেস্টাইনের ওপর ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়।

এর আগে বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসরায়েল কর্তৃক একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চলছে। তারা এর আগেও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ছোট শিশুরা আহত হচ্ছে, তাদের ওপর জুলুম হচ্ছে। তারা অত্যাচারিত, মা-বাবা হারা। বিষয়টা সত্যি দুঃখজনক। যাদের দেখি মানবতার এত কথা বলেন, কিন্তু এই সময় চুপ থাকে। আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা এখন আর কথা বলে না। সেটাই আমার প্রশ্ন।

তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনে যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই আমনবিক। সেখানকার ছোট্ট শিশুদের কান্না, তাদের অসহায়ত্ব- মাতৃ-পিতৃহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানো সহ্য করা যায় না। প্যালেস্টাইনের ভাইদের সঙ্গে আমরা সবসময় আছি। অতীতেও তাদের জন্য সাধ্যমত সবরকম সহযোগিতা করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। এ সহযোগিতা আমরা অবশ্যই করে যাবো। ইসরায়েলের এ ঘৃণ্য আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোকপ্রস্তাবের মধ্যদিয়ে বাজেট অধিবেশন শুরু করতে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সময় আমি মতিন খসরুকে বেশি না ঘোরাঘুরি করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে নির্বাচনে তাকেই জিততেই হবে। এজন্য সারা দেশে তিনি সফর করেন। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ওই সময় প্রতিদিনই আমি তার স্বাস্থ্যের খবর নিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাকে বাঁচানো গেল না।

আসলামুল হককে স্মরণ করে তিনি বলেন, আসলামুল হক আমাদের নিবেদিত কর্মী ছিল। আন্দোলন সংগ্রাম সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এলাকার জন্য কাজ করেছেন। এজন্য বার বার নির্বাচিত হয়েছে। হঠাৎ করেই তার মৃত্যুর সংবাদ পেলাম। যা খুবই দুঃখজনক।

শেখ হাসিনা বলেন, জীবনটাই হয়ে গেছে এমন- কে যে কখন আছে, কে যে কখন নেই তার হিসাবই নেই। বিশেষ করে এই করোনার দ্বিতীয় ঢেউটা যখন এলো আমরা আবারো চেষ্টা করলাম সেটাকে কোনভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু হঠাৎ আমাদের বর্ডার এলাকায় প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যাই হোক, আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সবাইকে আবারও বলবো, সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন। বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি আমার এ আহ্বান থাকবে। টিকাদান থেকে শুরু করে সবরকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তারপরও নিজেদের সুরক্ষিত থাকতে হবে।

এদিকে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানার এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা কেনার বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। চীন সরকারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। এ  টিকার প্রয়োগ ২৫ মে থেকে শুরু হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা সংগ্রহের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের জন্য কোভ্যাক্স বরাবর পত্র দিয়েছে। ফাইজারের টিকার এক লাখ ৬২০ ডোজ এসে পৌঁছেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার রাশিয়া থেকে টিকা আমদানির জন্যও ইতোমধ্যে আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা সংগ্রহের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চলমান রেখেছে সরকার। টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। 

তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সংগৃহীত এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা দ্বারা কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৮ মে ২০২১ পর্যন্ত দেশের চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোট ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩১২ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে টিকা সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় এপ্রিল মাসে ভারত সরকার টিকা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।